এটা হল না! ওটা নেই! ওর হল, আমার হল না! আগে ছিল এখন হারিয়ে গেছে! – এই ধরনের যত আফসোস ততই অসুখী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।অথচ জীবনের যা আছে তাই নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকলে সুস্থ ও সুখী থাকা যায়।সাম্প্রতিক গবেষণাতে এরকম তথ্যই পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেন নিউ জিল্যান্ড’য়ের ‘ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলিংটন’য়ের ‘স্কুল অফ সাইকোলজি’র গবেষকরা।
গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গবেষকরা দেখতে পান মস্তিষ্কের যে অংশে কৃতজ্ঞতার ভাবনা উদিত হয় সেখানে শুধু আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয় না পাশাপাশি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।‘দি জার্নাল অফ পজিটিভ সাইকোলজি’তে প্রকাশিত এই গবেষণায় আরও দাবি করা হয়- সুখ অনুভবের সাথে কৃতজ্ঞতা বোধের অনুভূতির নিবিড় বন্ধন রয়েছে।পরিবার, বন্ধু, ভালোবাসা, স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা, মাথার ওপর ছাদ, আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্মৃতি, আর্থিক অবস্থা, প্রিয় জায়গা, প্রিয় খাবার, সাপ্তাহিক ছুটি, সুন্দর আবহাওয়া- এরকম ছোট ছোট যে কোনো বিষয়গুলো নিয়ে যদি কৃতজ্ঞ থাকা যায়, অর্থাৎ যা জীবনে আছে যা আসছে তাতেই কৃতজ্ঞা থাকার মধ্য দিয়ে সুখী থাকা সম্ভব।
যে কোনো রকম হতাশা মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে যায়- জানানো হয় গবেষণায়।জীবনের ভালো বিষয় নিয়ে যত সচেতন হওয়া যাবে ততই ভালো বোধ হয়ে। আর যথেষ্ট পরিমাণে কৃতজ্ঞতা বোধ থাকলে অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার পরিমাণও কমে।মানসিক চাপ ও মানসিক আঘাত মোকাবিলা করার একটি উপায় হল, মেনে নেওয়ার ক্ষমতা। যা কৃতজ্ঞ থাকার সাথে সম্পর্কিত।যুক্তরাষ্ট্রের ‘জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটি’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়- ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়া যোদ্ধারা, যুদ্ধ পরবর্তী মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠেছেন নিজের জীবনে বর্তমানে যা আছে সেগুলোকে আশীর্বাদ হিসেবে ধরে নিয়ে।‘আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ জানাচ্ছে, ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পর নিজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার মাধ্যমে অনেকেই মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠেছেন।
আর বস্টন’য়ের ‘নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা বলছেন, ‘যত বেশি কৃতজ্ঞ থাকতে পারবেন ততেই আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য্য ধারণ করা সম্ভব হবে।’এসব গবেষণায় দেখানো হয়েছে, শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর পরোক্ষভাবে ভালো প্রভাব ফেলে কৃতজ্ঞতা বোধ।সুইজারল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি অফ জুরিখ’য়ের করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ‘স্বভাবগতভাবে যারা কৃতজ্ঞ থাকতে পারে’ এবং বৃহত্তরভাবে ইতিবাচকতার সাথে প্রশংসায় থাকে, সার্বিকভাবে তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন।’‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার’য়ের ‘স্কুল অফ সাইকোলজি’র করা গবেষণায় জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্কদের দেওয়া তথ্যানুসারে, ঘুমের সময় কৃতজ্ঞ থাকার চিন্তাভাবনার মাধ্যমে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারছেন তারা, এবং ঘুমও ভালো হচ্ছে। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ অনিদ্রা রোগে ভুগছিলেন।তাই জীবনে সুখী হতে চাইলে, আফসোস বোধ কমিয়ে যা আছে তাতেই কৃতজ্ঞ থাকার অনুশীলন করার পরামর্শ দেওয়া হয় এসব গবেষণায়।